ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযাহা আমল ও সুন্নাত

ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযাহা আমল ও সুন্নাত
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ইসলামি বন্ধুরা, সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক । আজকে আমি আপনাদের জন্য দুই ঈদের কিছু আমল ও সুন্নাত সম্পর্কে বলেছি আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে ।

ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে সুন্নাত কাজ কি?

উত্তরঃ ঈদুল ফিতরের সালাতের জন্য ঈদ্গাহে যাওয়ার পূর্বে কোন মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া সুন্নাত ।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের দিন খেজুর না খেয়ে ঈদ্গাহে রওয়ানা করতেন না । আর তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন । [সহীহ আল বুখারীঃ ১/৪০২, হাদিস নংঃ ৮৯৯]

ঈদের সালাতের জন্য কীভাবে আসা-যাওয়া করা সুন্নাত?

উত্তরঃ ঈদের সালাতের জন্য পায়ে হেঁটে আসা-যাওয়া সুন্নাত ।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) পায়ে হেঁটে ঈদ্গাহে আস যাওয়া করতেন । [সহীহ সুনানে ইবনে মাজাঃ ১ম খন্ড, হাদিস নং-১০৭১]

ঈদ্গাহে আসা যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা কি আবশ্যক?

উত্তরঃ ঈদগাহে আসা এবং যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নাত ।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) ঈদগাহে আসা এবং যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করে নিতেন । [সহীহ আল বুখারীঃ ১/৪১৪, হাদিস নংঃ ৯২৯]

ঈদের সালাত কোথায় আদায় করা উচিৎ?

উত্তরঃ ঈদের সালাত বসতির বাইরে খোলা ময়দানে আদায় করা সুন্নাত ।

মহিলাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া কি জায়েয?

উত্তরঃ ঈদের সালাতের জন্য মহিলাদেরকে ঈদগাহে যাওয়া চাই ।

উম্মে আতিয়্যা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আদেশ দেন যেন আমরা দুই ঈদে ঋতুবতী এবং পর্দার আড়ালের মহিলাদের ঈদগাহে নিয়ে আসি ফলে তারা যেন মুসলমানদের সাথে সালাত এবং দোয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, তবে ঋতুবতীরা সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে । [মুসলিম শরীফঃ ৩/২৪৪ হাদিস নংঃ ১৯২৬]

ঈদের সালাতের জন্য আযান ও ইক্বা‌মতের বিধান কি?

উত্তরঃ ঈদের সালাতের জন্য আযান ও ইক্বা‌মত নেই ।

জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আযান-ইক্বা‌মত ছাড়া অনেকবার ঈদের সালাত আদায করেছি । [মুসলিম শরীফঃ ৩/২৪১, হাদীস নংঃ১৯২১]

ঈদের সালাতে তাকবীরের সংখ্যা কত?

উত্তরঃ দুই ঈদের সালাতে বারটি তাকবীর বলতে হয় । প্রথম রাকাতে কেরাতের পূর্বে সাত, আর দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর বলা সুন্নাত ।

নাফে (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে ঈদুল ফিতর এবং কোরবানীর ঈদের সালাত আদায় করেছি । প্রথম রাকাতে তিনি কেরাতের পূর্বে সাত তাকবীর বললেন, আর শেষ রাকাতে কেরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর বললেন । [মুয়াত্তা ইমাম মালেকঃ সালাত অধ্যায়, ঈদের নামাজে কিরাত অনুচ্ছেদ]

বিঃদ্রঃ আমাদের সমাজে ছয় তাকবীরে যে ঈদের সালাত প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না ।

ঈদের সালাতে কখন খুতবা দিতে হয়?

উত্তরঃ উভয় ঈদের সালাতে প্রথমে সালাত অতঃপর খুতবা দেয়া সুন্নাত । 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবু বকর ও উমর উভয় ঈদের সালাত খুতবা দেওয়ার পূর্বে আদায় করতেন । [বুখারী শরীফঃ১/৪০৪, হাদিস নংঃ ৯০২]

ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে কোন সালাত পড়া কি জায়েয?

উত্তরঃ ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে কোন সালাত নেই ।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের দিন সালাতের জন্য আগমন করে এবং দুই রাকাত সালাত পড়ালেন এর পূর্বেও কোন সালাত আদায় করেন নি এবং পরেও কোন সালাত আদায় করেন নি । [মুসলিম শরীফঃ ৩/২৪৪, হাদীস নংঃ ১৯২৭]

ঈদের সালাতের পর ঘরে ফিরে সালাত পড়া কি জায়েয?

উত্তরঃ ঈদের সালাতের পর ঘরে ফিরে দুই রাকাত সালাত আদায় করা মুস্তাহাব ।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদের পূর্বে কোন সালাত  আদায় করতেন না, যখন ঈদের সালাত আদায় করে ঘরে ফিরতেন তখন দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন । [সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১ম খন্ড, হাঃ নংঃ ১০৬৯]

যদি জুমার দিন ঈদ হয় তাহলে জুমআ ও ঈদের সালাতের বিধান কি?

উত্তরঃ যদি জুমার দিন ঈদ চলে আসে তখন উভয় সালাত আদায় করাই ভাল কিন্তু ঈদের পর যদি জুমআর স্থানে জোহরের সালাত আদায় করা হয় তাও জায়েয আছে ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) বলেন, তোমাদের আজকের দিনে দুই ঈদ একত্রিত হয়ে গেছে (এক ঈদ, দ্বিতীয় জুমআ) কেউ চাইলে তার জন্য জুমআর সাথে ঈদের সালাত যথেষ্ট হবে । কিন্তু আমরা ঈদ ও জুমআ উভয় আদায় করবে । [সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১ম খন্ড, হাদিস নংঃ ১০৮৩]

মেঘের কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখা না গেলে কী করণীয়?

উত্তরঃ মেঘের কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখা না গেলে পরে রোজা রাখার পর চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেলে তখন রোজা ভেঙ্গে দেয়া আবশ্যক ।

যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পূর্বে চাদের খবর পাওয়া যায় তখন সেদিনেই ঈদের সালাত পড়ে নিবে । আর যদি সূর্য পশ্চিমকাশে ঢলার পর সংবাদ পাওয়া যায় তখন দ্বিতীয় দিন সালাত আদায় করে নিবে । [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]

আবু উমাইর ইবনে আনাস (রাঃ) আপন এক আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা বললেন, মেঘের কারণে আমরা শাওয়ালের চাঁদ দেখিনি তাই আমরা রোযা রেখেছি । পরে দিনের শেষভাগে এক কাফেলা আগমন করল । তারা নবী কারীম (সাঃ) এর কাছে রাত্রে চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষী দিল । নবী কারীম (সাঃ) লোকজকে সে দিনের রোজা ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দিলেন এবং তার পরের দিন সকালে ঈদের সালাতে আসার জন্য বললেন । [সহীহ সুনানে আবু দাউদঃ ১ম খন্ড, হাদীস নংঃ ১০৬২]

তাকবীর বলা কী?

উত্তরঃ ঈদ্গাহে আসা-যাওয়ার সময় তাকবীর বলা সুন্নাত ।
আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর (রাঃ) বর্ণিত, তিনি ঈদের দিন সকাল সকাল সূর্য উদয়ের সাথে সাথে ঈদ্গাহে তাশরীফ আনতেন এবং ঈদ্গাহ পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতে করতে যেতেন এবং ঈদ্গাহে পৌছার পরও তাকবীর বলতেন । যখন ইমাম বসে যেতেন তখন তাকবীর পাঠ বন্ধ করতেন । [নায়লুল আওতারঃ ৩/৩৫১]

যদি কেউ ঈদ্গাহে যেতে না পারে তাহলে তার কি করা উচিৎ?

উত্তরঃ যদি কেউ ঈদের সালাত না পায় অথবা অসুস্থতার কারণে ঈদ্গাহে গমণ করতে না পারে তখন একা একা দুই রাকাত সালাত পড়ে নিবে ।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) আপন দাস ইবনে আবী উতবাকে যাবিয়া গ্রামে সালাত আদায়ের আদেশ দিলেন । তিনি গ্রামবাসীদের একত্রিত করলেন । সকলে মিলে শহরবাসীদের ন্যায় সালাত আদায় করলেন এবং তাকবীর বললেন । ইকরামা (রাঃ) বলেন, গ্রামবাসীরা ঈদের দিন একত্রিত হবে এবং ইমামের ন্যায় দুই রাকাত সালাত আদায় করবে । আতা (রাঃ) বলেন যখন কোন ব্যক্তির ঈদের সালাত ছুটে যাবে তখন সে দুই রাকাত আদায় করে নিবে । [বুখারী শরীফঃ ১/৪১৪ (অনুচ্ছেদ)]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন