রোজা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত কি কি

রোজা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত

রোজা রাখা অবস্থা ব্যতিত অন্যসময় পানাহার করা আমাদের জন্য বৈ । শুধু বৈধই নয় বরং বেঁচে থাকার জন্য ইহা অপরিহার্য ও বটে । কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় যদি আমরা পানাহার করি তাহলে আমাদের রোজা যে বরবাদ হয়ে যাবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই । পানাহারের ন্যায় একটি বৈধ কাজ করলে যদি আমাদের রোজা বরবাদ হয়ে যায় তাহলে রোজা রাখা অবস্থায় সর্ব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ কোন কাজে লিপ্ত হলে আমাদের রোজা শুদ্ধ হবে তা কি করে আশা করা যায়?

এ প্রসংঙ্গে নবী করীম (সাঃ) এর নিম্নের দুটি হাদীস প্রনিধান যোগ্য ।

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) এর উদৃত্তি দিয়ে ইবনে মাজা শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) বলেন, এমন অনেক রোজাদার রয়েছে রোজার বিনিময়ে যাদের অনাহারে থাকা ব্যতীত আর কিছুই লাভ হয় না । আবার অনেক রাত্রি জাগরনকারী এমন আছে যারা নিশি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবে না ।

হাদিসের ব্যাখ্যা কারকগনের মতে উপরোক্ত হাদীসে নিম্নোক্ত তিন ধরনের রোজাদারের কথা বলা হয়েছে যাদের রোজা শুদ্ধ হবে না ।

  • যে সকল রোজাদার দিনভর রোজা রেখে হারাম মাল কিংবা হারামা বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত মাল দ্বারা ইফতার করে । হারাম বস্তু দ্বারা ইফতার করার কারণে তাঁদের রোজাতো কবুল হবেই না তদোপরি হারাম মাল খাওয়ায় তাঁদের আমল নামাজ রোজার ছাওয়াবের চেয়ে ও অধিক পাপ লিখা হবে ।
  • যে সকল রোজাদার রোজা রেখে গীবত কিংবা পরচার্চায় লিপ্ত হয়ে । 
  • যে সকল রোজাদার রোজা রেখেও পাপ কাজ ত্যাগ করে না ।
অনুরুপভাবে যে সকল রাত জাগরণকারী হাসিঠাট্টা করে, অন্যের গীবত করে গালগল্প করে রাত কাটিয়ে ফজরের নামাজ কাযা করে ফেলে কিংবা সুফী আখ্যায়ীত হওয়ার জন্য লোক দেখানো নিশি জাগরণ করে তাঁদের রাত জাগরণ অনর্থক এবং নিস্ফল । এদের খাতায় পুন্যের চেয়ে পাপের পরিমানই বেশি লিখা হয় ।
নাছায়ী শরীফের অপর এক হাদীস থেকে জানা যায়, নবী কারীম (সাঃ) বলেন, রোজা মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ, যতখন পর্যন্ত উহাকে ফেড়ে ফেলা না হয় ।

এখানে রোজা মানুষের জন্য ঢাল হওয়ার অর্থ হল, মানুষ ঢাল দ্বারা যেরুপ শক্রর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে ঠিক তদ্রুপ রোজা রেখেও শয়তানের চক্রান্ত হতে রক্ষা পাওয়া যায় । আবার রোজা আল্লাহর আযাব এবং জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দেয় । কিন্তু রোজাদার যদি রোজাকে ফেড়ে ফেলে তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যায় , এবং তখন আর ঢাল হিসেবে কাজ করে না রোজা কিভাবে ফেড়ে যায় এ প্রশ্নের জবাবে নবী করীম (সাঃ) বলেন, মিথ্যা এবং গীবতের দ্বারা রোজা ফেড়ে যায় । কারো কারো মতে মিথ্যা এবং পরনিন্দা দ্বারাও রোজা নষ্ট হয়ে যায় ।

উপরোক্ত হাদীসদ্ব‌য়ের সার কথা হল- সারা দিন রোজা রেখে হারাম বস্তু ধারা ইফতার করা রোজা অবস্থায় অন্যের গীবত করা, মিথ্যা বলা, পরচর্চা করা কিংবা অন্য যে কোন পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া দ্বারা রোজা নষ্ট হয়ে যায় ।

ফাজায়েলে আমল কিতাবে বর্ণিত আছে বুজুর্গানে দ্বীন রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ছয়টি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন । অর্থাৎ এ ছয়টি শর্ত যথাযথ ভাবে পালন না করলে রোজা শুদ্ধ হবে না ।

শর্তগুলি নিম্নরুপঃ
  • চক্ষুর হেফাজত করা অর্থাৎ অপাত্রে দৃষ্টি দান না করা । এমনকি স্বীয় স্ত্রীর প্রতি কামদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেও রোজার অঙ্গহানি হয় ।
  • জবানের হেফাজত করা অর্থাৎ মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, বাজে কথা, কটুবাক্য ইত্যাদি থেকে জিহব্বাকে সংযক্ত রাখা । কারণ এসকল কাজের দ্বারা রোজা ফেড়ে যায় । আর রোজা ফেড়ে গেলে উহা ঢাল হিসেবে কাজ করে না ।
  • কানের হেফাজত করা অর্থাৎ যে সকল কথা মুখে উচ্চারণ করা না জায়েজ ঐ সকল কথার প্রতি কর্মপাত না করা, নবী করীম (সাঃ) বলেন, গীবত কারী এবং শ্রোতা উভয়ই পাপের মধ্যে শামিল ।
  • শরীরের অবশিষ্ট সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত করা, যেমন হাতকে নিষিদ্ধ বস্তু স্পর্শ করা হতে, পাকে অবৈধ স্থানে গমন হতে, পেটকে সন্দেহ জনক বস্তু জনক বস্তু খাওয়া হতে রক্ষা করা ইত্যাদি ।
  • ইফতারের সময় হালাল মাল দ্বারা ইফতার করা । তবে উদরপুর্তি করে না খাওয়া । কারণ এতে রোজার উদ্দেশ্য ব্যহত হয় ।
  • মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে রোজা কবুল হয় কিনা এ ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকা ।
মোফাচ্ছেরীনগন "কুতেবা আলাইকুমু চ্ছিয়াম" এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, মানুষের প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে । মুখের রোজা হল মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, কুটুবাক্য ইত্যাদি পরিহার করা । কানের রোজা হল অকথ্য ভাষা ও গান বাজনা না শুনা । চোখের রোজা হল অপাত্রে দৃষ্টি দান না করা এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রোজা হল যে অঙ্গটি যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ অঙ্গটিকে কেবলমাত্র ঐ কাজ ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার না করা ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন