সাওম কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

সাওম কত প্রকার ও কি কি, রোজার প্রকারভেদ, রোজার পরিচয়, রোজা কাকে বলে, রোজার ফরজ কি কি, ওয়াজিব রোজা কত প্রকার, সাওম কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, রোজার ইতিহাস, সাওম কাকে বলে, সাওম এর পরিচয়, সাওম কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, সিয়াম কাকে বলে, রোজা কি এবং কেন, রোজার উদ্দেশ্য কি, রোজার ফরজ কয়টি, রোজা ফরজ হয় কত হিজরীতে,

রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ । নবী করিম (সাঃ) এর এক হাদীসে বর্ণিত আছে দৈর্ঘ ঈমানের অর্ধেক । অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে রোজা ধৈর্য্যের অর্ধেক । সুতরাং রোজা হল ঈমানের অর্ধেকের অর্ধেক । অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ । রোজা আল্লাহ পাকের সাথে সম্পর্কযুক্ত । এ জন্য ইহা ইসলামের সকল রোকনের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট রোকন ।

রোজার গুরুত্ব ও ফজীলত এতই বেশি যে তা বর্নণা করে শেষ করা সম্ভব নয় । আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত রোজার এ অফুরন্ত ফজীলত ও বরকত লাভ করার একটিই মাত্র পথ । আর তা হল যথা যথ ভাবে রোজা পালন করা । আর যথাযথ ভাবে রোজা পালন করার প্রথম শর্ত হল রোজা কি এবং কিভাবে রোজা পালন করতে হয় তা জেনে নেওয়া ।

রোজা কি 

রোজা একটি বাংলা শব্দ যা আরবি প্রতিশব্দ হল সাওম । আর সাওম এর বহুবচন হল সিয়াম । আরবি সাওম শব্দের অর্থ হল চুপ থাকা, নিবৃত হওয়া, বিরত থাকা বা ছেড়ে দেওয়া । আর ইসলামি শরিয়াতের ভাষায় সুবহি সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, কামাচার এবং রোজা ভঙ্গকারী অন্যান্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বল হয় । রোজাদার ব্যক্তি যেহেতু রোজা অবস্থায় রোজা ব্যতীত অন্য সময় তার জন্য যা হালাল বা বৈধ ঐ সমস্ত কর্মকান্ড সহ অন্নর্থক কথা বলা এবং গুনাহ বা নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে এ জন্য এ ইবাদাতকে সাওম বা রোজা নাম করণ করা হয়েছে ।

রোজার ফরজ

রোজার ফরজ ২টি যথাঃ-

  • রোজার নিয়ত করা
  • রোজা পালন করা অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার কামাচার এবং রোজা ভঙ্গকারী অন্যান্য কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা ।

রোজার সুন্নাত

রোজার সুন্নাত ১০টি যথা
  • দেরি করে সেহরী খাওয়া ।
  • শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের তথা- হাত, পা, কান, চক্ষু, জিহ্বা, নাসিকা, অন্তর, প্রভৃতির রোজা পালন করা ।
  • সুর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা ।
  • ইফতার করা কালে ইফতারের দোয়া পড়া ।
  • খোরমা, খেজুর অথবা পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা ।
  • রাতে তারাবীহের নামাজ আদায় করা ।
  • তারাবীহের নামাজে কুরআন খতম করা অথবা শোনা ।
  • গরীব  মিসকিনদের ও মসজিদ মাদ্রাসায় বেশী বেশী দান খয়রাত করা ।
  • সর্বদা দোয়া, দরুদ, তাসবীহ তাহলীল ও কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকা ।
  • রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা এবং মসজিদে ইফতার করা ।

রোজার প্রকার ভেদ

রোজা মোট পাঁচ প্রকার যেমনঃ- 
১। ফরজ রোজা- রমজান মাসের রোজা ।
২। ওয়াজিব রোজা-ওয়াজিব রোজা তিন ধরনের হতে পারে যেমন- 
  • যে সকল রোজা রাখার জন্য মান্নত করা হয় অর্থাৎ মানতি রোজা ।
  • নফল রোজা রাখার পর তা ভেঙ্গে ফেললে তার কাযা আদায় করা ওয়াজিব ।
  • বিনা ওজরে রোজা ভঙ্গ করলে তার কাফফারার রোজা আদায় করাও ওয়াজিব ।
৩। সুন্নাত রোজা-মহররম মাসের ১০ তারিখের রোজা ।
৪। নফল বা মুস্তাহাব রোজা-উপরে বর্ণিত রোজা গুলো ব্যতীত অন্য সকল রোজাই নফল বা মুস্তাহাব । যেমন সাওয়াল মাসের ছয় রোজা, ইত্যাদি ।
৫। মাকরুহ রোজা মাকরুহ দুই প্রকার । যথা 
  • মাকরুহে তাহরীমা
  • মাকরুহে তানযীহ
মাকরুহ তাহরীমা ঐ সকল রোজা যা দুই ঈদের দিন এবং আইয়ামে তাশরীকে (অর্থাৎ ঈদুল আজহার পরের তিন দিনে) রাখা হয় ।
আর মাকরুহ তানযীহ হল ঐ সকল যা মাত্র একদিন রাখা হয় ।

রোজার নিয়ত

রমজানের রোজা রাখা যেমন ফরজ রোজার নিয়ত করাও তেমনি একটি ফরজ । সুতরাং একটি রোজা রাখলে একসংঙ্গে দুটি ফরজ আদায় হয়ে যাবে । আর নিয়ত যদি সঠিক ভাবে করা না হয় তাহলে রোজাই বরবাদ হয়ে যায় । রমজানের রোজার নিয়ত করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক ।
  • প্রত্যেক রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে । পুরো রমজানের রোজা কিংবা কয়েক দিনের রোজার নিয়ত এক সংঙ্গে করলে রোজা হবে না ।
  • আগামী কাল রমজান মাস হলে রোজা রাখব এরূপ সন্দেহ জনকভাবে নিয়ত করলে রোজা হবে না, বরং পরিপূর্ণ আস্থা সহকারে নিয়ত করতে হবে ।
  • অন্তরে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি এবং আশা সহ নিয়ত করতে হবে । অর্থাৎ আল্লাহ পাক আপনার উপর জোর করে রোজার ন্যায় কষ্টকর একটি ইবাদাত চাপিয়ে দিয়েছেন এরূপ মনোভাব নিয়ে নয় বরং রোজার ন্যায় একটি উৎকৃষ্ট ইবাদাত ফরজ করায় আপনি আল্লাহ পাকের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আনন্দিত এরূপ মনোভাব নিয়ে এবং রোজার ফজীলত সমুহ পুরোপুরি লাভ করার আশা পোষন করে রোজায় নিয়ত করতে হবে ।
  • ভোর রাতে সেহরী খাবার পর সুবহে সাদিকের পূর্বেই রমজানের রোজার নিয়ত করতে হবে । কারো কারো মতে দিনের বেলা নিয়ত করলেও চলবে । হযরত হাফসা (রাঃ) এর উদৃত দিয়ে তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত আছে , নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের আগেই রোজার নিয়ত করেনি তার রোজা হয় নি । সম্ভবত এ হাদীসের ভিত্তিতেই বিশ্ব বরেন্য ইসলামী চিন্তাবিধ ইমাম গাজ্জালী (রহ) তার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ এই ইয়াউ ইলুমিদ্দীন কিতাবে অত্যন্ত সুপষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, রমজানের রোজার নিয়ত অবশ্যই সুহবে সাদিকের পূর্বেই করতে হবে । অন্যথায় রোজা হবে না । তবে নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলা দ্বিপ্রহরের আগে করলেও চলবে ।  প্রসংগত উল্লেখ্য, পাক-ভারত উপ মহাদেশ প্রচলিত রমজানের রোজার আরবী নিয়তের মধ্যে একটি শব্দ হল গাদামমিন যার বাংলা অর্থ হল আগামীকাল । কেউ যদি দিনের বেলা আগামী কাল রোজা রাখার নিয়ত করে তাহলে তার ঐদিনের রোজার নিয়ত হল কি করে ।
  • নামাজের নিয়ত উচ্চারণ করে বলার কোন প্রয়োজন নেই । কোণ ওয়াক্তের কত রাকাত কি নামজ (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত) পড়িতেছি তা স্ব‌রণ থাকাই যথেষ্ট । কিন্তু রমজানের রোজার নিয়ত অবশ্যই উচ্চারণ করে বলতে হবে । তা না হলে ফরজ আদায় হবে না । নিয়ত জোড়ে উচ্চারণ করা মোস্তাহাব আর আস্তে আস্তে উচ্চারণ করলেও ফরজ আদায় হয়ে যাবে ।
  • রোজার নিয়ত আরবিতেও করা যায় আবার বাংলাতে করা যায় ।
বন্ধুরা আজকের পোস্ট এই পর্যন্ত শেষ করলাম আশা করি এই লেখা গুলো আপনাদের একটু হলেও উপকারে আসবে ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন